মাজহাবের পক্ষে - ২ : আমি কেন হানাফি?

 
Written By Sanjir Habib On Jul-9th, 2017

মাজহাবের পক্ষে - ২ : আমি কেন হানাফি?


ছোট ক্লাসেই বুখারি শরিফ পড়া আরম্ভ করেছিলাম। বাংলা অনুবাদ। দেখতাম অনেক হাদিস আমরা যেভাবে পালন করি তার বিপরিত। যেমন নামাজে রাফে ইয়াদাইন আছে।

কলেজ জীবনে মোটামুটি কুতুব সিত্তা [সিহা সিত্তা] শেষ। সব হাদিস মনে থাকতো না। কিছু থাকতো, কিছু ভুলে যেতাম।


ভার্সিটিতে উঠার পর এক পরিচিত আহলে হাদিস ভাই ধরলেন। আমার বাসায়। অনেকক্ষন বুঝালেন।

উনার সাথে দ্বিমত হতে পারলাম না। আমরা যেভাবে নামাজ পড়ি সেটা সত্যিই বুখারি শরিফে নেই। প্রমানের দরকার নেই, আমি হাদিসগুলো পড়ে এসেছি। এবং সৌদির কিছু লোক শুধু হকের উপর আছে যারা ঐ ভাবে নামাজ পড়ে।

উনি আরো বললেন,
- আমরা অনুসরন করবো শুধু কোরআন আর হাদিস।
- ইমাম আবু হানিফার অনুসরন করলে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরন করা হবে না।
- চার ইমাম অনুসরনের কথা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলে যান নি।
- আমরা ভুল নামাজ পড়ছি। এটা পথ ভ্রষ্টতা।
- ইমামদের উপর দোষ চাপিয়ে আখিরাতে পার পাবো না। হাদিসের কথা। ইমামদের সংগে আমাদেরকেও জাহান্নামে ফেলা হবে।


উনার কথা মেনে নিলাম। যুক্তি যুক্ত।

এর পর থেকে মনে হতে লাগলো দুনিয়ার ৯০% মুসলিম ভুলের উপর আছে। ৯০% মুসলিমই জাহান্নামের দিকে ছুটছে, ভুল পথকে সঠিক ধারনা করে।

রাসুলুল্লাহ ﷺ এর দ্বীন দুনিয়া থেকে অনেক আগে প্রায় মুছে গিয়েছে, বহু যুগ আগে যখন মাজহাব প্রচার হয়েছিলো তখন। সঠিক দ্বিন আর কয়জন পালন করে? ১০% হয়তো, যারা মূলতঃ সৌদিতে থাকে। বাকি দুনিয়ার সবাই তো মাজহাবী! না জেনে অজ্ঞাতে দুনিয়ার মুসলিমরা সবাই জাহান্নামে ছুটছে।

আমার ইয়ং রক্ত, একটু এক্সট্রিমিস্ট।


ছয় মাস গেলো। এক বড় ভাইকে বললাম।

উনি বললেন, “আমরা যেভাবে নামাজ পড়ি এটাও হাদিসে আছে। তিরমিযি শরিফে পাবে। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা: এর বর্ননায়। মূলতঃ হানাফি মাজহাবের অধিকাংশ জিনিস এসেছে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা: এর শিক্ষা থেকে। আর তারা যেভাবে পড়তে বলে সেটা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা: এর বর্ননা। যে কোনো একজন সাহাবির অনুসরন করলেই হলো। সবাই হক।”

বললাম, “মনে পড়েছে, পড়েছি। কোন কিতাব, মনে ছিলো না।”

লাইব্রেরিতে এসে তরিমিযি শরিফ খুলে আবার দেখলাম। আমরা যেভাবে নামাজ পড়ি হাদিসে সেই বর্ননা!

৯০ এর কথা।


যেই ভাই আমাকে প্রথমে বুঝিয়েছিলেন, উনি আমাকে the whole truth বলেন নি। তিরমিযি শরিফের হাদিসগুলোর কথা চেপে গিয়েছিলেন।

পরে জেনেছি ঐ হাদিসগুলোর ব্যপারে তাদের আপত্তি আছে। But that’s beside the point. আমাকে বলা হয়েছিলো এরকম কোনো হাদিসই নেই। আমি দেখলাম আছে। Can’t take any more of their words at face value.

আস্থা হারিয়েছি।


৯০% মানুষ যে জাহান্নামের উপর ছুটছিলো – সেই বিশ্বাস? এই আইডলজিও উল্টে যায়।

বরং ৯০% ই ঠিক। রাসুলুল্লাহ ﷺ যে দ্বিন প্রচার করে গিয়েছিলেন সেটা উনার ওফাতের ১০০ বছর পর পরেই মুছে যায় নি, যখন মাজহাবগুলো প্রাচার হয়েছিলো। এবং সব মানুষ জাহান্নামি না।

এর পর থেকে, যখনই নতুন কোনো আইডলজি গ্রহন করে আমি উপলব্ধি করতাম – ৯০% মুসলিম ভুলের উপর আছে, তখনই ধরে নিতাম তারা কেউ ভুলের উপর নেই। আমি নিজেই ভুলের উপর আছি।

লিটমাস টেস্ট।

#HabibHanafi

আগের পর্ব:
https://web.facebook.com/habib.dhaka/posts/10154725458383176